বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি ।।
জামালপুরের বকশীগঞ্জ পৌরসভার শ্মশান ঘাট থেকে কুড়িয়ে পাওয়া নবাজাতক এক কন্যাশিশুটির দত্তক নেওয়ার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছে আদালতে। জামালপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিদর্শক (প্রবেশন অফিসার) বিষয়টি নিয়ে জামালপুর আদালতের দ্বারস্থ হলে আজমেরি বেগমসহ আরো দুই জন আদালতের কাছে শিশুটিকে দত্তক পেতে আবেদন জানিয়েছেন।
এ দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটির খোঁজ খবর নিয়েছেন। তিনি ১১ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই শিশুকে দেখতে যান এবং কোলে নিয়ে আদর করেন। এ সময় ওই শিশুর জন্য বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করেন। তবে শিশুটির বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি ইউএনও । তবে তিনি মানবিক কারণে শিশুটিকে দেখতে এসেছেন এবং তার পাশে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, যেহেতু শিশুটির অভিভাবক নির্ধারণ নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে তাই আদালতের সিদ্ধান্তের পর শিশুটিকে হস্তান্তর করা হবে।
জানা গেছে, গত ২৯ মার্চ বকশীগঞ্জ পৌর এলাকার শ্মশান ঘাট থেকে নবাজাতক এক কন্যাশিশুকে কুড়িয়ে যাওয়া যায়। সেখান থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন বকশীগঞ্জ পৌরসভার নারী কাউন্সিলর রহিমা বেগম। পরে ওই শিশুটিকে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। শিশুটির কোনো পরিচয় না পাওয়া গেলে অনেকেই দত্তক নিতে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মাহবুব আলমের কাছে মৌখিক আবেদন করেন।
এ নিয়ে স্থানীয় কামারপট্টি এলাকার সুমন মিয়ার নিঃসন্তান স্ত্রী আজমেরি বেগম ওই শিশুটিকে বুকের দুধ পান করান। পরে মৌখিকভাবে খন্ডকালীন সময়ের জন্য ওই শিশুকে আজমেরির কাছে প্রদান করা হয়। তবে ওই শিশুকে কাছে পেয়ে নিজের সন্তানের মতই ভালবাসতে শুরু করেছেন আজমেরি বেগম। তিনি সব সময় ওই শিশুকে আদর-সোহাগ দিয়ে আগলে রেখেছেন। আজমেরি বেগম নিজের বুকের দুধ খাওয়ানোসহ সব কিছুই করছেন শিশুটির জন্য।
জামালপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিদর্শক বিষয়টি নিয়ে জামালপুর আদালতের দ্বারস্থ হলে আজমেরি বেগমসহ আরো দু’জন আদালতের কাছে শিশুটিকে দত্তক পেতে আবেদন করেছেন। বিজ্ঞ আদালত মানবিক দিক বিবেচনা করে যা সিদ্ধান্ত দেবে তাই কার্যকর করবে উপজেলা প্রশাসন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিশুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি অবস্থায় আজমেরি বেগমের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা চিকিৎসক জাহিদুল আরেফিন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘নি:সন্তান আজমেরি বেগমের বুক থেকে অলৌকিকভাবে দুধ বের হচ্ছে। সেই দুধ খেয়ে বর্তমানে শিশুটি সুস্থ রয়েছে।’