কুরআন শিক্ষা: বিধান, পদ্ধতি ও ফযীলত
আল-কুরআন সমস্ত মুসলিম জাতির পরিপূর্ণ একটি জীবনবিধান। এটি পৃথিবীর সবথেকে পবিত্র গ্রন্থ যা সম্পূর্ণ আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত। এটি এমন একটি কিতাব যার কারনে জাহেলী জাতি পর্যন্ত সৌভাগ্যবান জাতি হিসাবে পরিগণিত হয়েছিল। আল্লাহ এই গ্রন্থ টিকে শেখা এবং পাঠ করা আমাদের জন্য ফরজ করেছেন। একজন মানুষ যদি ঈমানের সাথে জীবন যাপন করতে চায়, তার জন্য কুরআন শিক্ষার বিকল্প নেই।
আসলে মুসলিম হিসাবে আমাদের কাছে কুরআনের কোনো বিকল্প নেই। এটি বাধ্যতামূলক। তবে বর্তমানে এটি শেখা ও পাঠ করার প্রতি মানুষের অনেক অনীহা দেখা যায়। এর ফল ভবিষ্যতে অনেক খারাপ হতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের সকলেরই কুরআন শিক্ষার বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। তাই এই লেখাটিতে আমরা কুরআন শিক্ষা, এর বিধান, পদ্ধতি ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এখান থেকে পেয়ে যাবেন।
আপনি কি কুরআন শিখতে চান? বর্তমানে বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়েছে যার মাদ্ধমে খুব সহজেই আপনি সহিহ পদ্ধতিতে কুরআন শিখতে পারবেন। আপনি যদি চান খুব সহজে ও কম খরচে সেখান থেকে কুরআন শিখতে পারেন।
আল-কুরআন শিক্ষাঃ বিধান, পদ্ধতি ও ফজিলত
আল্লাহ তায়ালা জিবরাঈল আঃ এর মাদ্ধমে আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাকেই মূলত আল কুরআন বলে। এই কিতাবটি মোট ২৩ বছর ধরে সম্পূর্ণ মানব জাতির হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা অবতীর্ণ করেছেন।
এই পবিত্র গ্রন্থটি তেলওয়াতের ফজিলত অনেক। চলুন শুরুতেই এর ফজিলতগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক যাতে করে কুরআন মাজিদ তেলওয়াতের প্রতি আপনাদের আগ্রহ অনেকাংশের বেড়ে যায়। ফজিলতগুলো হচ্ছেঃ
কুরআন তেলওয়াত করে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করার মাধ্যমঃ
স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা কুরআন তেলওয়াত করবে, তারা নিঃসন্দেহে লাভবান হবেন। এই ব্যবসায় কোনো ক্ষতি নেই। আল্লাহ তায়ালা এর পূর্ণ প্রতিদান দিবেন। নিজে অনুগ্রহ করে আরও অধিক দান করবেন। পাশাপাশি আল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করার অন্যতম মাধ্যম এই কুরআন। এই ইবাদতটি আপনাকে আল্লাহর খুব কাছে নিয়ে যাওয়ার সুজোগ করে দিবে।
কুরআন তেলওয়াতকারি সর্বত্তোম ব্যক্তি
সহিহ বুখারি হাদিসে এসেছে, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিখতে সাহায্য করে। অতএব, এই কুরআন তেলওয়াতের মাধ্যমেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ। এটি এমন একটি কিতাব, যা পাঠের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি হরফের জন্য আমাদের সাওয়াব দিবেন।
কুরআন শিক্ষার সম্পদ অর্জনের শামিল
একটি সহিহ মুসলিম হাদিসে এসেছে, তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়াত চারটি উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুযায়ী আয়াত উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম। এজন্য এই পবিত্র গ্রন্থটি পাঠ করা এবং সে অনুযায়ী নিজের জীবন অতিবাহিত করা বিভিন্ন সম্পদ অর্জন অপেক্ষা উত্তম।
কুরআন তেলওয়াত ঈমান বৃদ্ধিতে সহায়ক
কুরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সম্বন্ধে খুব ভালো ভাবে জানা যায়। পাশাপাশি আমরা যদি আল্লাহর ঈমান না আনি সেক্ষেত্রে আমাদের পরিণতি সম্পর্কেও খুব ভালো ধারণা পাওয়া যায়। এজন্য এর তেলওয়াত এর মাধ্যমে আমাদের ঈমান আরও দৃঢ় হয়। আল-কুরআন তেলওয়াতে এতো বেশি বরকত ও মহিমা আছে, যে কেউ আল্লাহর ঈমান আনতে বাধ্য হবে। এরকম অনেক নওমুসলিম এর গল্প আছে যেখানে কুরআন পড়ার মাধ্যমে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন এবং আল্লাহর ঈমান এনেছেন।
কুরআনের ধারক একজন ঈর্ষনীয় ব্যক্তি
সহিহ বুখারি হাদিসে এসেছে, শুধু দুই ধরনের ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা করা যাবে। প্রথমত যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের এলেম দান করেছেন এবং দিবারাত্র সে তা তেলওয়াতে ব্যস্ত থাকে। দ্বিতীয়ত, যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা অনেক সম্পত্তি দান করেছেন এবং সে ওই সম্পত্তি সারাক্ষণ সৎকাজে ব্যয় করায় ব্যস্ত থাকে। এর থেকেই বোঝা যায় একজন কুরআনের পাঠক এবং ধারক কত মূল্যবান ব্যক্তি।
কুরআন তেলওয়াত জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম
কুরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার খুব কাছে যাওয়া সম্ভব। কুরআন হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান। যে ব্যক্তি নিয়মিত কুরআন তেলওয়াত করবে এবং সে অনুযায়ী আমল করে তার জীবন অতিবাহিত করবে, সে নিঃসন্দেহে জান্নাত বাসি হবে। তাই এই বিষয়ে খুব নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, কুরআন তেলওয়াত জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম।
কিয়ামতের দিন এই আল কুরআন তার পাঠক দের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। আর যারা আল কুরআন পাঠ করবেনা তারা হাশরের ময়দানে কুরআন ত্যাগকারী বলে বিবেচিত হবেন। যাহোক আসুন কুরআন শিক্ষার বিধান ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
কুরআন মাজিদ আমাদের কাছে একটি পবিত্র আমানত। এই আমানতের যাতে খিয়ানত না হয় তার জন্য আমাদের কিছু কাজ করনীয়। তার মধ্যে অন্যতম হলোঃ
কুরআন মাজিদের বিশুদ্ধ ভাবে তেলওয়াত করতে শেখা।
কুরআন মাজিদের অর্থ ও তাফসীর রাসুল সাঃ ও তার সাহাবীরা দিয়ে গেছেন তা বুঝে পড়া।
কুরআন মাজিদ পড়ে সেই অনুযায়ী জীবন-যাপন করা।
শুধু নিজেরাই না, সকলকে কুরআন মাজিদ পড়তে ও সেই অনুযায়ী জীবন-যাপন করতে উদ্বুদ্ধ করা।
এই কাজগুলো আমাদের প্রত্যেক মুসলিম এরই করা উচিত। এর জন্য প্রথম যে করিনিও তা হচ্ছে কুরআন শিক্ষা। এই কুরআন শিক্ষার করনীয় কাজ গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
শিক্ষকের মাধ্যমে শেখা
আল- কুরআন শিক্ষার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হচ্ছে একজন কুরআনের শিক্ষকের কাছ থেকে শেখা। শিক্ষকেরা এই বিষয় অনেক গবেষণা ও চর্চা করে থাকেন। এজন্য তারা জানেন কিভাবে খুব সহজে একজনকে কুরআন শিক্ষা দেওয়া যায়। এজন্য, যদি সম্ভব হয় একজন ভালো শিক্ষকের কাছ থেকে কুরআন শিখুন।
কুরআন শিক্ষার কোর্স করা
এখন অনলাইন এ অনেক কুরআন শিক্ষা কোর্স পেয়ে যাবেন। চাইলেই খুব সহজেই ওইসব কোর্স গুলো করে ঘরে বসেই কুরআন শিখতে পারবেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোর্স গুলোতে অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ ইন্সট্রাক্টর দারা সহিহ কুরআন শিক্ষা দেওয়া হয়।
কুরআন শিক্ষা বই পড়া
কুরআন শিক্ষার বিভিন্ন স্কলার এর বিভিন্ন বইও পেয়ে যাবেন বাজারে। আপনি চাইলেই একটি ভালো লেখকের বই কিনে নিয়মিত চর্চা করতে পারেন। ওইসব বইগুলোতেও খুব সুন্দর ভাবে কুরআন শিক্ষার সব নিয়মাবলী দেওয়া থাকে।
নিয়মিত কুরআন তেলওয়াত করা
কুরআন শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের উচিত নিয়মিত ভাবে কুরআন তেলওয়াত করা। এই চর্চার ক্ষেত্রে সবথেকে ভালো সময় হচ্ছে ফজরের নামাজের পরে। এই সময় আমাদের প্রোডাক্টিভিটি সবথেকে বেশি থাকে। তাই যেকোনো কিছুই খুব সহজে শেখা যায় এই সময়। আর শুধু কুরআন শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়, মুসলিম হিসাবে এমনিতেই প্রতিটি মানুষেরই উচিত প্রতিদিন একবার হলেও কুরআন তেলওয়াত করা।
পরিবার পরিজনকে শেখানো
আপনি যদি কুরআন মাজিদ পড়ায় দক্ষ হয়ে থাকেন, আপনার উচিত আপনার ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি সকলকেই কুরআন শিক্ষা দেওয়া। আল-কুরআন হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এটি আমাদের পরিপূর্ণ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান। তাই সকলেই যদি এই পবিত্র গ্রন্থটি পাঠ করেন এবং সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করেন, তাহলে এই সমাজে কোনো ঝামেলা, দন্দ-ফ্যাসাদ থাকবেন।
ফজিলত পূর্ণ সূরা গুলো নিয়মিত পড়া
আমাদের আল্লাহ তায়ালা অসীম দয়াবান। তিনি আমাদের জন্য সকল ইবাদত গুলো খুব সহজ করে দিয়েছেন। কুরআন তেলওয়াত এর ক্ষেত্রেও আল্লাহ তায়ালা এমন কিছু সূরা ঠিক করে দিয়েছেন যেগুলো পাঠ করে খুব সহজেই অসীম সাওয়াব অর্জন করা যায়। একটি সহিহ বুখারি হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সূরা ইখলাস পাঠ করবে, সে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করার সাওয়াব পাবে। এরকম আরও বিভিন্ন ফজিলতপূর্ণ সূরা রয়েছে যা পাঠ করলে খুব সহজেই অধিক পরিমানে সাওয়াব আমরা পেতে পারি।
উপসংহার
আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় মেহেরবানী যে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আল-কুরআন দিয়েছেন। এই পবিত্র গ্রন্থ পাঠ ও অনুসরন করার মাধ্যমে খুব সহজেই আমরা ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনেই সফল হতে পারি। এর গুরুত্ব ও ফযিলত এতো সংক্ষেপে আলোচনা করা সম্ভব নয়। তারপর যতটুকু সম্ভব আমরা এই অনুচ্ছেদ টিতে তুলে ধরেছি।
এই লেখাটির আলোচ্য বিষয় ছিল কুরআন শিক্ষা, এর বিধান, পদ্ধতি ও ফজিলত। আশা করি এই লেখাটি পড়ে আপনার এই বিষয়ক কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন। আর কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আসুন সকলেই কুরআন পড়ি এবং সেই অনুযায়ী আমাদের জীবন অতিবাহিত করি।