বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি ।।
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটক ও দর্শনার্থী কমে গেছে। গত কয়েক দিনের অপ্রীতিকর কিছু ঘটনায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে করে বিনোদন কেন্দ্রের ব্যবসায়ী ও ইজারাদার আথিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্রে বেড়াতে গিয়ে স্থানীয় বখাটেদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন এক স্কুল ছাত্রী। ১৫ দিন আগে দুলাল মিয়া নামে এক ব্যক্তি সেখানে ভ্রমন করতে যায়। পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য লীলাভূমি গারো পাহাড়ে ঘুরতে বের হলে স্থানীয় কিছু বখাটে তাকে মারধর করে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে অন্যান্য দর্শনার্থী চার বখাটেকে আটক করে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় বকশীগঞ্জ উপজেলায় তোলপাড় শুরু হয়। বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে ওই চার বখাটেকে আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করে।
শুধু তাই নয় এ রকম অহরহ ঘটনা ঘটছে এই অবসর বিনোদন কেন্দ্রে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সঠিক তদারকি না থাকায় প্রায় সময়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক ওইসব অপ্রীতিকর ঘটনার পর থেকে হতাশাজনক ভাবে দর্শনার্থী ও পর্যটক কমে গেছে। বিশেষ করে নারী দর্শনার্থীদের দেখা মিলছে না। দূরদূরান্তের কোনো দর্শনার্থী এখানে আসছেন না।
৯ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা গেছে, লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্রে খাঁ খাঁ করছে। এই বিনোদন কেন্দ্রের টিকিট বিক্রেতারা অলস সময় পার করছেন। শিশু পার্কে কোনো শিশু তো দূরের কথা একটা পাখিও নেই। পর্যটকদের জন্য গাড়ি রাখার স্থানে কোন গাড়িও দেখা মেলেনি।
বিনোদন কেন্দ্রের ভেতরে সব হোটেলগুলোও রয়েছে বন্ধ। দর্শনার্থী ও পর্যটক না থাকায় হোটেল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জেলা পরিষদের ডাকবাংলো খোলা থাকলেও কোন অতিথি আসেন নি।
এ জন্য নিরাপত্তাহীনতাকে দায়ী করেন অনেকেই। কারণ বকশীগঞ্জ থানা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্র। বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ মাঝে মাঝে এখানে আসলেও পর্যাপ্ত জনবল ও বিশেষ কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আগমন না ঘটলে প্রতিদিন এখানে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হয় না। এখান থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে সাতানিপাড়া বিজিবির একটি বিওপি থাকলেও সীমান্তে নানা ব্যস্ততার কারণে তারাও নিরাপত্তা দিতে পারেন না। দূরদূরান্তের পর্যটকরা প্রথমে এই বিনোদন কেন্দ্রে আসলেও নিরাপত্তাহীনতা ও নানা কারণে এখানে আসতে চান না। এ ছাড়াও এই বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশমূল্য নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি আদায় করায় দর্শনার্থীদের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ। সব মিলিয়ে নানা কারণেই পর্যটক কমে গেছে এই বিনোদন কেন্দ্রের।
তবে দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লাউচাপড়া এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করলে আরো সমৃদ্ধি হতে পারে জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রিত লাউচাপড়া বিনোদন কেন্দ্রটি।
লাউচাপড়া বিনোদন কেন্দ্রের সাবেক ইজারাদার তারেক মহাম্মদ রানা জানান, জেলা পরিষদ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিংবা একটি পুলিশ ফাঁড়ি দিলে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা কেটে যাবে । নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক থাকলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও পর্যটকরা আসবেন।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মাহবুব আলম বলেন, থানা পুলিশ যতুটুকু সম্ভব নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে থানায় জনবল কম থাকায় বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে লাউচাপড়ায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের বিষয়ে তিনিও দর্শনার্থীদের সাথে একমত পোষন করেন।