নিজেকে অন্য সব মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর সকলকে নিজের চেয়ে অধম ও ছোট মনে করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যকরা, চরম ঔদ্ধ্যত প্রকাশ করত: আল্লাহর আদেশ নিষেধ উপেক্ষা করে তাঁর অবাধ্যচারী হওয়া, এ সবই অহংকার, যা গুরুতর কবিরা গুনাহ।
অহংকারের নিন্দা ও অহংকারীর প্রতি ধিক্কার জানিয়ে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, ‘মুসা বললো, যারা হিসাব দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে না, এমন প্রত্যেক অহংকারী থেকে আমি আমার ও তোমাদের প্রভুর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে নিয়েছি।’ (সূরা মু ’মিন-২৭)
মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘নিশ্চই আল্লাহ অহংকারীদের ভালোবাসেন না ।’ (সূরা আন-নহল)
রাসূল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এক লোক দম্ভভরে চলাফেরা করতো। আল্লাহ তাকে যমীনে ধসিয়ে ফেলেন। সে মহা হিসাব পর্যন্ত মাটির অতলে দাবতেই থাকবে।’ (বুখারী)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘অত্যাচারী ও দাম্ভিক-অহংকারী সৈরাচারীদেরকে হাশরের দিন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিঁপড়ার আকৃতিতে একত্র করা হবে । লোকেরা তাদেরকে পা দিয়ে পাড়াবে এবং চারিদিক থেকে তাদের প্রতি শুধু লাঞ্ছনা ও অপমান বর্ষিত হতে থাকবে ।’ (নাসায়ী ও তিরমিযী)
কোনো কোনো বুযুর্গ বলেন, সর্বপ্রথম যে পাপের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশের অবাধ্যতা প্রকাশ করা হয় তা হচ্ছে অহংকার । আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, ‘এবং আমি যখন ফেরেশতাদেরকে বললাম, হজরত আদম (আ.)-কে সিজদা কর , তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করলো, সে নির্দেশ পালনে অস্বীকার করলো এবং অহংকার করলো । ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।’ (সূরা বাকারা-৩৪)
এ থেকে বুঝা যায় যে,অহংকারবশতঃ যে আল্লাহর হুকুম অমান্য করে, আল্লাহর ওপর তার বিশ্বাস থাকলেও তাতে কোনো ফায়দা হবে না । যেমন -অহংকারের কারণে ইবলীসের ঈমান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। নবী করীম (সা.) বলেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকারও আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না ।’ (মুসলীম)
আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পচ্ছন্দ করেন না।’ (সূরা লোকমান- ১৮)
রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘শ্রেষ্ঠত্ব আমার পোশাক এবং অহংকার আমার চাদর । যে এ দুটি আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায়, তাকে আমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।’ (মুসলীম)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বির্তকে লিপ্ত হবে। জান্নাত বলবে, কী ব্যাপার? আমার ভেতর মানবগুলীর শুধু দুর্বল ও নিরীহ লোক ছাড়া কেউ প্রবেশ করবে না আর জাহান্নাম বলবে, আমাকে তো স্বেচ্ছাচারী ও অহংকারীদের দিয়েই ভর্তি করা হচ্ছে। আল্লাহ তাদের বিরোধ মিটিয়ে দিয়ে বলবেন, ‘ওহে জান্নাত! তুমি আমার রহমতের নির্দশন। যাকে ইচ্ছা তাকে আমি তোমায় দিয়ে প্রদান করে থাকি। আর ওহে জাহান্নাম! তুমি আমার শাস্তির প্রতিক। তোমার মাধ্যমে যাকে ইচ্ছা তাকে শাস্তি দিয়ে থাকি। তবে তোমাদের দু’জনকেই পুর্ণরুপে ভর্তি করা হবে।’ (মুসলীম)
আল্লাহ বলেন, ‘অহংকারবশে কাউকে মুখ ভেচকি দিও না, (মানুষকে অবজ্ঞা করো না), গর্বভরে পৃথিবীতে চলাফেরা করো না, নিশ্চই আল্লাহ কোনো অহংকারী দাম্ভিককে পচ্ছন্দ করেন না।’ (সূরা লোকমান-১৮)
হজরত সালমা ইবনুল আকওয়া (রা) বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সামনে বাম হাতে খাদ্য খেল। রাসূল (সা.) বলেন, ‘ডান হাতে খাও। সে বললো ডান হাতে আমি খেতে পারি না। তিনি বললেন না, তুমি তা পার, এটা তোমার অহংকার বৈ কিছুই নয়। অতঃপর সে আর কখনো ওই হাত মুখের সামনে তুলতে সক্ষম হয়নি।’ (মুসলীম শরীফ)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কে জাহান্নামী, আমি কী তা তোমাদেরকে জানাবো না? জাহান্নামী হলো সে, যে নির্মম হৃদয়ী, রুঢ়স্বভাবী, অবাধ্যচারী এবং অহংকারী দাম্ভিক।’ (বুখারী ও মুসলীম)
হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে লোক অহংকারবশে চলাফেরা করে এবং নিজেকে নিজে বড় মনে করে, সে যখন আল্লাহর সাক্ষাৎ করবে, তখন সে আল্লাহকে তার প্রতি ক্রোধান্বিত দেখবে। (তাবরানী ও হাকেম)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন, প্রথমে তিন প্রকার লোক জাহান্নামে যাবে। তারা হলো, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী ও অত্যাচারী শাসক, জাকাত অনাদায়কারী বিত্তবান এবং অহংকারী গরীব। (ইবনে হিব্বান, ইবনে খোজায়েমা)
বুখারী শরীফে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘হাশরের দিন আল্লাহ তিন প্রকারের মানুষের দিকে ফিরেও তাকাবেন না, তাদেরকে পাপ থেকে পবিত্রও করবেন না, বরং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সেই তিন প্রকারের মানুষ হচ্ছে-) পায়ের গোড়ালীর নিচে ঝুলিয়ে পোশাক পরিধানকারী, দান বা অনুগ্রহ করে খোটাদানকারী এবং মিথ্যা শপথ করে দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয়কারী।’ গোড়ালির নীচে ঝুলিয়ে পোশাক পরিধান করা অহংকারের নিদর্শন। এ জন্যই রাসূল (সা.) বলেন, ‘যার পরিধেয় বস্ত্র গোড়ালির নীচে গড়াবে সে জাহান্নামে যাবে।’