বিনোদন ডেস্ক ॥
বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমনি কা-ের পর একে একে তার উচ্ছৃঙ্খল জীবন ও অপকর্ম নিয়ে বের হয়ে আসছে নানা ঘটনা। নায়িকার চেয়ে প্রভাবশালী মহলে চলাফেরা করা এবং কতিফয় পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে তার সখ্যর বিষয়টি একসময় ওপেন সিক্রেট থাকলেও এখন চলচ্চিত্রের লোকজন প্রকাশ্যেই বলছেন। প্রভাবশালী মহলের সাথে গভীর সম্পর্ক থাকায় পরীমনির অপকীর্তি নিয়ে কেউ মুখ না খুললেও পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় চলচ্চিত্রাঙ্গণে এ নিয়ে মুখরোচক আলোচনা চলছে। তারা বলছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ঘনিষ্টতা এবং ছত্রছায়ায় পরীমনি ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করতেন। কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। ফলে রাজধানীর ক্লাবগুলোতে দলবল নিয়ে হাজির হয়ে নিজের ইচ্ছামতো প্রভাব খাটাতেন। ইতোমধ্যে অল কমিউনিটি ক্লাব ও বনানী ক্লাব কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ভাংচুরের অভিযোগ তুলেছে। চলচ্চিত্রের বেশ কয়েকজন নির্মাতা কথা প্রসঙ্গে বলেন, চলচ্চিত্রে পরীমনির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা তিনি কাজে লাগাননি। বরং নায়িকার লেবেল লাগিয়ে প্রভাবশালী মহলের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগী হয়েছেন। নায়িকা হওয়ার চেয়ে প্রভাবশালীদের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে কিভাবে শর্ট কাটে বড়লোক হওয়া যায়, এ পথ বেছে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিকও হয়েছেন। এখন নতুন নায়িকার পক্ষে সিনেমার পারিশ্রমিক দিয়ে কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট, গাড়ি ও ধন-সম্পদের মালিক হওয়া অসম্ভব। চলচ্চিত্রে বছরের পর বছর ধরে কাজ করেও অনেক জনপ্রিয় নায়িকার পক্ষে এত বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব হয়নি। তারা বলেন, একজন নতুন নায়িকা যার কোনো সিনেমা ব্যবসা সফল হয়নি, তার পক্ষে কি অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব? কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাহলে পরীমনি কি করে এত সম্পদের মালিক হলেন? এখন মনে হচ্ছে, নায়িকার লেবেলটি ধরে রাখার জন্য পরীমনি নামকাওয়াস্তে সিনেমায় অভিনয় করতেন। সেসব সিনেমা ব্যবসা সফল হবে কি হবে না, এ নিয়ে তার কোনো চিন্তা থাকত না। তিনি প্রভাবশালী মহলে ঘুরে বেড়ানোর জন্যই ‘আমি নায়িকা’ এ পরিচয় ব্যবহার করতেন। তাদের সঙ্গ দিয়ে অনৈতিকভাবে ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন। তারা বলেন, পরীমনি পুলিশ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক অঙ্গণের একশ্রেণীর প্রভাবশালীদের কাছে নায়িকা হতে পেরেছন। দর্শকের নায়িকা হতে পারেননি। তারা বলেন, আমরা বহু নায়িকাকে নিয়ে কাজ করেছি। প্রতিষ্ঠিত অনেক নায়িকাকে দেখেছি চলচ্চিত্রে নিজের অবস্থান শক্ত করার জন্য দিন রাত পরিশ্রম করতে। তাদের ধ্যান-জ্ঞান চলচ্চিত্র নিয়ে। নির্মাতাদের সাথে সিনেমার ভাল গল্প ও চরিত্র নিয়ে কথা বলতেন। পরীমণির মধ্যে এরকম বৈশিষ্ট্য দেখিনি। তার ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিলেই দেখা যাবে সেখানে তার কোনো অবস্থান নেই। এমন কিছু নতুন প্রযোজক রয়েছেন তারা শুধু পরীমনির সঙ্গ পেতে সিনেমা নির্মাণে এসেছেন। তারা সিনেমা নির্মাণের চেয়ে পরীমনির সঙ্গ পেতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। পরীমনিও তাদের সঙ্গ দিয়ে ব্যাপক পয়সা-কড়ি কামিয়ে নিয়েছেন। এসব প্রযোজকের সিনেমা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। চলচ্চিত্রাঙ্গণের লোকজন এখন বলাবলি করছেন, পরীমনি নিজের খোঁড়া গর্তে নিজেই পড়েছেন। তার সঙ্গে পুলিশ থেকে শুরু করে প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে কাদের সাথে বেশি ঘনিষ্টতা ছিল তা তদন্ত করলে অনেক কিছু বের হয়ে আসবে। দেখা যাবে, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসছে, যেমনটি ঘটেছিল ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির সময়। চলচ্চিত্রের লোকজন এখন বলাবলি করছেন, বোট ক্লাবে গভীর রাতে পরীমনি গিয়েছিলেন প্রভাবশালীদের সঙ্গ দিতে। সেখানে যে অর্থ দেয়ার কথা ছিল তা না পাওয়ায় তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া-ঝাটির সৃষ্টি হয়। তারা বলছেন, অন্ধকার জগতের নায়িকা হওয়া যত সহজ, চলচ্চিত্র দর্শকের নায়িকা হওয়া তার চেয়ে অনেক কঠিন। পরীমনি অন্ধকার জগতটিকেই বেছে নিয়েছেন।