❒ ছিটমহল দ্বারা একটি দেশের এমন অঞ্চল বা ভূ-খ-কে বোঝায় যা অন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মূল ভূ-খ-ের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অবস্থিত।
❒ অন্যকোন স্বাধীন রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত এলাকা। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রে অভ্যন্তরেই অন্য রাষ্ট্রের এ ধরণের ছিটমহল রয়েছে।
❒ ২০১৫ সালের ১ আগস্টের পূর্বে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের সর্বমোট ১৬২টি ছিটমহল ছিল।
❒ ১ আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনিটে দুই দেশ ঐতিহাসিক মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আওতায় একে অন্যের অভ্যন্তরে থাকা নিজেদের ছিটমহলগুলো পরস্পরের সাথে বিনিময় করে।
❒ এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ছিটমহল ছিল বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভারতের ছিটমহল দাশিয়ারছড়া।
❒ দাশিয়ারছড়ার ভেতরেই আছে চন্দ্রখানা নামের বাংলাদেশের একটি ছিটমহল যেটি বাংলাদেশে থেকে যায়।
❒ এটি পৃথিবীর একমাত্র ছিটমহল ছিল যার অভ্যন্তরে অন্যদেশের আরেকটি ছিটমহল ছিল।
❒ কোচ রাজার জমিদারির কিছু অংশ রাজ্যের বাইরের বিভিন্ন থানা পঞ্চগড়, ডিমলা, দেবীগঞ্জ পাটগ্রাম, হাতিবান্দা, লালমনিরহাট, ফুলবাড়ি ও ভুরুঙ্গামারিতে অবস্থিত ছিল।
❒ ভারত ভাগের পর ওই ৮টি থানা পূর্ব পাকিস্থানের অন্তর্ভূক্ত হয়। আর কুচবিহার একীভূত হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে।
❒ ফলে ভারতের কিছু ভূ-খ- আসে বাংলাদেশের কাছে। আর বাংলাদেশের কিছু ভূ-খ- যায় ভারতের কাছে। এই ভূমিগুলোই ছিল ছিটমহল।
সীমানা নির্ধারণের সমস্যা
❒ ১৯৪৭ সালে বাংলা ও পাঞ্জাবের সীমারেখা টানার পরিকল্পনা করেন লর্ড লুই মাউন্টব্যাটন। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিটিশ আইনজীবী সিরিল র্যাডক্লিফকে প্রধান করে সে বছরই গঠন করা হয় সীমানা কমিশন।
❒ ১৯৪৭ সালের ৮ জুলাই ল-ন থেকে ভারতে আসেন র্যাডক্লিফ। মাত্র ছয় সপ্তাহের মাথায় ১৩ আগস্ট তিনি সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন।
❒ কোনো রকম সুবিবেচনা ছাড়াই হুট করে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সীমানা নির্ধারনের বিষয়টি যথাযথভাবে হয়নি।
❒ অভিযোগ রয়েছে, কমিশন সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা আর জমিদার, নবাব, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও চা বাগানের মালিকেরা নিজেদেও স্বার্থে দেশভাগের সীমারেখা নির্ধারণে প্রভাব ফেলেছে।
❒ ১৯৫৮ সালের নেহেরু-নুন চুক্তি অনুসারে বেরুবাড়ীর উত্তর দিকের অর্ধেক অংশ ভারত এবং দক্ষিণ দিকের অর্ধেক অংশ ও এর সংলগ্ন এলাকা পাবে বাংলাদেশ।
❒ চুক্তি অনুসারে বেরুবাড়ীর সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ভারতের অসহযোগিতায় মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে বেরুবাড়ীর দক্ষিণ দিকের অর্ধেক অংশ ও এর ছিটমহলের সুরাহা হয়নি।
❒ এরপর ১৯৭৪ এর মুজিব-ইন্দরা চুক্তির পর দুই দেশ ছিটমহলের আলাদা আলাদাভাবে তালিকা তৈরি কাজ শুরু করে। কিন্তু দুই পক্ষের তালিকায় দেখা দেয় গরমিল। পরে ১৯৯৭ সালের ৯ এপ্রিল চূড়ান্ত হয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ও ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে।
❒ তবে, ১৯৫৮ সালে সই হওয়া নেহেরু-নুন চুক্তিতে ছিটমহল উল্লেখ থাকলেও এ ব্যাপারে ভারতের তৎকালীন রাাষ্ট্রপতি সেই দেশের সংবিধানের ১৪৩ ধারা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান।
❒ তখন আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবিধানের সংশোধনীর মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে। পরে ভারতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সংবিধান সংশোধনী আর জনগণনার অজুহাতে বিলম্বিত হয়েছে ছিটমহল বিনিময়।
❒ অবশেষে, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ৬ ও ৭ মে ২০১৫ সালের রাজ্যসভা এবং লোকসভায় সংবিধানের ১০০তম সংশোধনীর বিলে সীমান্ত চুক্তিটি পাশ করে।
❒ বাংলাদেশ ও ভারতের স্থল সীমান্ত ও ভিত্তিতে ৩১ জুলাই ২০১৫ সালের মধ্যরাতে অর্থাৎ ১ আগস্ট ২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উভয় দেশে থাকা ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়।
❒ এর ফলে বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল(১৭১৬০ একর) বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হয় এবং ভারতের মধ্যে থাকা ৫১টি ছিটমহল অর্থাৎ ৭১১০ একর ভারতের সাথে যুক্ত হয়।
ছিটমহলের উৎস
বাংলাদেশ-ভারত মোট ছিটমহল- ১৬২টি
তন্মধ্যে ভারতের ছিটমহল বাংলাদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ছিটমহল ভারতে অবস্থিত
লালমনিরহাট ৫৯ কুচবিহার ৪৭
পঞ্চগড় ৩৬
কুড়িগ্রাম ১২ জলপাইগুড়ি ৪
নীলফামারী ৪
মোট ১১১ মোট ৫১
একমাত্র ছিটমহল ছিল রংপুর বিভাগে বাংলাদেশের ছিটমহল
ভারতের যে রাজ্যে ছিল পশ্চিমবঙ্গে