২৫শে মার্চের কালরাত্রি:
৭০’এর নির্বাচনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। বরং, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে ইয়াহিয়া খান নানা বাহানা শুরু করেন। ১৬ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত চলে মুজিব-ইয়াহিয়া প্রহসনের বৈঠক। আর ইয়াহিয়ার নির্দেশে গোপনে পূর্ব পাকিস্তানে আসতে থাকে অস্ত্র আর সামরিক বাহিনী। এরপর ‘পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ নয়-মাটি চাই’ বলে হানাদার বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করে পৃথিবীর অন্যতম জঘন্য গণহত্যার হোতা ইয়াহিয়া। শুরু হয় ইতিহাসের ঘৃণিত হত্যাযজ্ঞ। যা ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে পরিচিত। ২৫ শে মার্চ রাতে হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয় তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে। তবে তার আগেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ২৬ মার্চ বেলা ২টায় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়। ২৭ মার্চ কালুরঘাটস্থ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ:
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে নিরীহ বাঙালিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র সংগ্রামে। বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে থাকে তারা। তবে ১৯ মার্চ থেকে শত্রুকে প্রতিরোধ করতে প্রথমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বীর বাঙালি সৈনিক। প্রাক্তন ইপিআর, আনসার, মোজাহেদ ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর বীর জওয়ানেরাও এতে অংশ নেয়। এদের সাথে আরও যোগ দেয় যুবক ও ছাত্ররা।
মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধ:
৪ এপ্রিল, ১৯৭১ সিলেটের তেলিয়াপাড়ার চা বাগানে কর্নেল এমএজি ওসমানীর নেতৃত্বে মুক্তিফৌজ গঠন করা হয়। এসময় এর সদস্য সংখ্যা ছিল ১৩,০০০। ৯ এপ্রিল মুক্তিফৌজের নামকরণ করা হয় মুক্তিবাহিনী এবং কর্নেল এমএজি ওসমানীকে এই বাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার নেতৃত্বে দু’টি বাহিনী গঠন করা হয় অনিয়মিত গেরিলা বাহিনী এবং নিয়মিত বাহিনী। নিয়মিত বাহিনীর অধীনে আবার ৩টি বিগ্রেড বাহিনী গঠন করা হয়- জেড ফোর্স, কে ফোর্স এবং এস ফোর্স। জেড ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান, কে ফোর্সের মেজর খালেদ মোশাররফ এবং এস ফোর্সের কেএম শফিউল্লাহ। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য পুরো দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে ১০ নম্বর সেক্টরটি ছিল নৌ সেক্টর। মে মাস পর্যন্ত নিয়মিত বাহিনী হিসেবে যুদ্ধ করে বীর বাঙালিরা। এরপর তারা গঠন করে একটি বিরাট গণবাহিনী ‘গেরিলা বাহিনী’। জুন মাসের শেষের দিকে গেরিলারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আগস্টে গঠিত নৌ কমান্ডো বীরত্ব ও কৃতিত্বের সাথে যুদ্ধ শুরু করে। ৩ ডিসেম্বর বাঙালিদের সাথে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে ভারতীয় সেনারা। এই যৌথ বাহিনীর যুদ্ধ চলে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
মুজিবনগর সরকার গঠন:
১০ এপ্রিল ১৯৭১ কুষ্টিয়ার বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা ইউনিয়নের ভবের পাড়া গ্রামের আম্রকাননে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এই জায়গার নতুন নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। তাই এই সরকারকে বলা হয় মুজিবনগর সরকার। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে, রাষ্ট্রপতি শাসিত এই সরকার ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে। এই দিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে তা কার্যকর হয়। পরবর্তীতে এই ঘোষণাপত্র অনুযায়ী দেশ চলতে থাকে।
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা:
এক কথায় বিনা দ্বিধায় বলা যায় যে, একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ও সুদূরপ্রসারী সাংবিধানিক পদৰেপ ছিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীসভার শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিশ্বব্যাপী প্রচারের ব্যবস্থা করা। এর ফলে বাঙালীদের সদ্য শুরু হওয়া সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ লাভ করে বিশাল ব্যাপকতা এবং শুরু হয় বিশ্বব্যাপী আমাদের স্বপৰে জনসমর্থন অর্জনে ব্যাপক সাড়া।
প্রকৃতপক্ষে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতাদের দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে মুজিবনগর সরকার গঠন করাটা ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপৰে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনে একটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য প্রক্রিয়া।আসলে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করা ছিল একটা বাসতবসম্মত ও সময় উপযোগী সাংবিধানিক পদক্ষেপ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক বাহিনী যখন নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে তখন সাংবিধানিক পদৰেপ হিসেবে এটাই ছিল তাদের জন্য একমাত্র আইনসম্মত রাজনৈতিক উদ্যোগ। আর তাই এর গ্রহণযোগ্যতাও ছিল ব্যাপক এবং প্রশংসিত হয়েছিলও সর্বত্র এবং সর্বমহলে। বেসামরিক প্রশাসন পরিচালনা করা বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে তাদের জন্য যথাযোগ্য প্রশিৰণ প্রদান এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ জোগাড় করা দুনিয়াব্যাপী কূটনৈতিক কর্ম পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ ও সরকারের সমর্থন আদায়ে সার্থক হওয়া এবং এমনি একটা বিরূপ পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল দৃঢ় রাখার জন্য যথাযোগ্য কর্মসূচি গ্রহণ করার কাজটা কিন্তু খুবই যোগ্যতা, দৰতা ও সাহসিকতার সঙ্গে সুসম্পন্ন করতে সমর্থ হয়েছিল মুজিবনগর সরকার।
মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ জনগ্ণ ও পেশাজীবীদের ভূমিকা:
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নিরন্ত্র জনগণের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আক্রমণ চালালে বাঙালি ছাত্র, জনতা, পুলিশ, ইপিআর, সাহসিকতার সাথে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁডায়। বিনা প্রতিরোধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাঙ্গালিরা ছাড় দেয়নি। দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন রণাঙ্গনে শহিদ হন, আবার অনেকে গুলি খেয়ে পঙ্গু হন। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের এ ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না। জাতি চিরকাল মুক্তিযোদ্ধাদের সূর্য সন্তান হিসাবে মনে করবে। তারা ছিল দেশপ্রেমিক, অসীম সাহসী এবং আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক, ইপিআর, পূলিশ, আনসার, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের বাঙালি অংশগ্রহণ করে। তাই এ যুদ্ধকে ‘গণযুদ্ধ’ বা জনযুদ্ধ বলা যায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি ছিল জনগণ। তাই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র, পেশাজীবী, নারী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশকে শত্র“মুক্ত করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।
মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রধান রাজনৈতিক দল হল আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক নেতৃত্বই মুক্তিযুদ্ধের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করে। আওয়ামী লীগ সর্বপ্রথমে পূর্ববাংলার জনগণকে স্বাধিকার আন্দোলনে সংগঠিত করে। এরপর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর জনগণকে স্বাধীনতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় আওয়ামী লীগ ছাড়াও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ন্যাপ(ভাসানী), ন্যাপ(মোজাফফর), কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় কংগ্রেস ইত্যাদি। আবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাকবাহিনীর সমর্থনে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, পিডিপিসহ কতিপয় দল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে। দলগুলো শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনী গঠন করে। এসব বাহিনী হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও নানা মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল।
মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা:
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা ছিল অহংকার করার মতো। একক গোষ্ঠী হিসেবে ছাত্রদের সংখ্যা ছিল বেশি। গোটা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। বলা যায়, দেশের সব আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে এদেশের ছাত্র সমাজ। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের অবদানের কথা বলতে গেলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিজয়ী বেশে অস্ত্র হাতে স্লোগানরত ছাত্রদের একটি অবিস্মরণীয় ছবি। বাংলাদেশে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ ও ৬৪ সালের শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ছয় দফার আন্দোলন, ১৯৬৮ সালে ১১ দফার আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভ্যানগার্ড হিসেবে তৎকালীন ছাত্রসমাজের ভূমিকা অপরিসীম। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় অংশ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। মুক্তিযুদ্ধকালে অসংখ্য ছাত্র বিভিন্নভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যায়। সেখানে বিভিন্ন শিবিরে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে ফিরে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারী তার সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করেছিল স্বাধীনতার মতো একটি বড় অর্জনে। যুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি নারী অংশগ্রহণ করেছিল জীবনবাজি রেখে। নারী সক্রিয় ছিল কখনও সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে, কখনোবা যুদ্ধক্ষেত্রের আড়ালে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন এমন নারীর সংখ্যাও অসংখ্য। অজানা-অচেনা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রূষা করেছেন বহু নারী নিজের শ্রম দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে। অনাহারী, অর্ধাহারী ক্ষুধার্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কখনও মমতাময়ী মায়ের মতো, কখনোবা বোনের মতো। নিজেরা খেয়ে না খেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার রান্না করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। চরম দুঃসময়ে পাকিস্তানি হানাদারের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। দুর্ভাগ্যজনক, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য নারীরা সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিশেষ কোনো স্বীকৃতি পাননি। অনেক নারীযোদ্ধাই হারিয়ে গেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা:
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতে জনগণের মনে প্রত্যাশা তৈরিতে ও জনমত গঠনে দেশ ও বিদেশ থেকে ঐ সময় প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য নিয়মিত ও অনিয়মিত পত্রপত্রিকা। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বাংলাদেশকে নিয়ে লেখা হয়েছে সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ, সংবাদ, কবিতা, গান, কার্টুন ইত্যাদি। প্রকাশিত সেসব পত্রপত্রিকাগুলো আজ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একেকটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, মুজিবনগর সরকার ও প্রবাসী বাঙালিদের প্রকাশিত এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকায় পাকবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ, ধ্বংসলীলা, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, শরণার্থী শিবিরের বর্ণনা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহের বিবরণ গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালীদের অবদান:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরবরাহ বাহিনীর দায়িত্ব পালন করেছেন | বিভিন্ন দেশে তারা মুক্তিযুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে সদস্যদের নিকট ছুটে গিয়েছেন। তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেছেন। পাকিস্তানকে অস্ত্র, গোলাবারুদ সরবরাহ না করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রবাসী সরকারের নিকট আবেদন করেছেন। এক্ষেত্রে ব্রিটেনের প্রবাসী বাঙালিদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা:
মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি ছিল জনগণ। তথাপি যুদ্ধে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ও অবদান ছিল খুবই প্রশংসনীয়। পত্র-পত্রিকায় লেখা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে খবর পাঠ, দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান, কবিতা পাঠ, নাটক, কথিকা অত্যন্ত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান-‘চরমপত্র’ ও ‘জল্লাদের দরবার’ ইত্যাদি মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। রণক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের মানসিক ও নৈতিক বল ধরে রাখতে উল্লিখিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সহায়তা করেছে ও সাহস জুগিয়েছে, জনগণকে শত্রুর বিরুদ্ধে দুর্দমনীয় করে তুলেছে।
মুক্তিযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব:
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানিদের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের কাহিনী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের সপক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। ভারত সে সময় ১ কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়ে বিশ্বজনমত তৈরিতে এগিয়ে এসেছিলেন। বাংলাদেশের সাহায্যে এগিয়ে এসে এসময় ভারতও সশস্ত্র যুদ্ধে নামে। সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন দেয়। তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের বিরোধিতা করলেও সে দেশের জনগণ, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়। তাদের প্রতিরোধের মুখে মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিটলস এর জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতীয় পণ্ডিত রবি শংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর আয়োজন করেছিলেন। ফরাসি সাহিত্যিক আন্দ্রে মারোয়া, জ্যা পল সাত্রে সহ অনেকেই বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে যৌথ বাহিনী:
১৯৭১ সালে যুদ্ধের প্রায় শেষদিকে ২১ নভেম্বর ভারতীয় পূর্বাঞ্চল কমান্ডের লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরার অধিনায়কত্বে ঘোষিত হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড।ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী মিত্রবাহিনী নাম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাক বিমান হামলা শুরু করে। ভারতীয় বিমানবাহিনী গভীর রাতেই বাংলাদেশের সব মুক্ত এলাকায় পৌঁছে যায়। সব রুট দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর অবিরাম বিমান হামলা চালিয়ে বাংলাদেশের সব বিমান ঘাঁটি অচল করে দেয়। কুর্মিটোলা এয়ারপোর্টে ৫০ টন বোমা ফেলা হয়। পাকিস্তানের এক ডজনের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্ত হওয়া ভারতীয় বিমান হামলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত অধ্যায়। তাছাড়া চোরাগোপ্তা আক্রমণ থেকে সরে এসে ভারতীয় যৌথবাহিনীর সাথে একসারিতে সম্মুখযুদ্ধে এগিয়ে যায় বীর বাঙালিরা। এতে মনোবল বাড়তে থাকে বাংলার দামাল ছেলেদের।
মুক্তিযুদ্ধ ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড:
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ও যৌথবাহিনীর দুর্বার প্রতিরোধ ও আক্রমণের মুখে পশ্চিমা হানাদার বাহিনী যখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল, তখন পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে এ দেশের সূর্যসন্তানদের ওপর। আর এ কাজে তাদেরকে সাহায্য করে তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস্ বাহিনী। দেশের মুক্তিকামী ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনকারী শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ডাক্তার, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের বেশির ভাগের ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ:
সংগ্রামী বাঙালি আর মিত্র বাহিনীর সাথে যুদ্ধে হানাদার বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে মিত্র বাহিনীর জেনারেল মানেকশ পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজীকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন। ১৬ ডিসেম্বর বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অর্থাৎ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ৯৩০০০ সৈন্য নিয়ে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন। সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরোরার নিকট তিনি আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকার।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা:
পাকিস্তানি শাসনামলে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বাঙালিদের ওপর শাসনের নামে শোষণ নির্যাতন চালায়। ফলে স্বৈরাচারী শাসকদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ১৯৭১ সালে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধ ছিল সকল শ্রেণির বাংলাদেশী মানুষের আদর্শ এবং নতুন দিনের পথপ্রদর্শক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজও মিশে আছে আমাদের জীবনে, আমাদের সাহিত্যে, সংগীতে, শিল্পকলায়, স্থাপত্যে আর ভাষ্কর্য শিল্পে। মিশে আছে আমাদের সংস্কৃতিতে। একে আমরা প্রতিবছর অনুভব করি স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস ইত্যাদি স্মরণীয় দিবসের মধ্য দিয়ে। বহু আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছে আমাদের বিজয়ের দিন। সফলতা পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন:
আমাদের নানা কর্মকাণ্ডে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ এবং প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস ইত্যাদি পালনের মধ্যেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুজ্জ্বল রাখার জন্য গড়ে তোলা হয় নানা ভাস্কর্য। মুক্তিযুদ্ধ যাতে বাংলাদেশের মানুষের কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকে, সেজন্য নানা ধরনের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, মুজিবনগরের স্বাধীনতা ঘোষণার স্মৃতিস্তম্ভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অপরাজয়ে বাংলা, রোকেয়া হলের পূর্ব পাশে অবস্থিত ভাস্কর্য, গাজীপুরের চৌরাস্তায় নির্মিত ভাস্কর্য ইত্যাদিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে। ঢাকার সেগুন বাগিচায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর’। এখানে সংগ্রহীত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য স্মৃতি এবং উপকরণ। এসব স্মৃতি উপকরণ পরবর্তী প্রজন্মের মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটাবে।
বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা :
বাংলাদেশের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। মুক্তিযুদ্ধের করুণ কাহিনী আর বীরত্বগাথা দিয়ে রচিত হয়েছে গল্প, উপন্যাস, নাটক, সঙ্গীত, প্রবন্ধ এবং অসংখ্য কবিতা-ছড়া। মাহবুবুল আলমের ভাষায়, “যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের যথেষ্ট প্রতিফলন লক্ষণীয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে এখানকার জীবনে যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল তা প্রত্যক্ষদর্শী ঔপন্যাসিকগণ উপেক্ষা করতে পারেন নি। তাই এখানকার উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের চিত্রাঙ্কনের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধোত্তর কালের জীবনের রূপায়ণেরও নিদর্শন প্রকাশিত হচ্ছে।” শওকত ওসমানের ’দুই সৈনিক’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘নীলা দংশন’, রাবেয়া খাতুনের ’মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী’, আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল রোটি আওরাত’, রিজিয়া রহমানের ’রক্তের অক্ষর’, সেলিনা হোসেনের ’হাঙর নদী গ্রেনেড’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘মহাযুদ্ধ’, শিরীন মজিদের ‘অপু বিজয় দেখেনি’ প্রভৃতি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস। শওকত ওসমানের ‘জন্ম যদি তব বঙ্গে’ গ্রন্থের সবগুলো গল্পই রচিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত গল্প’ সংকলন। কল্যাণ মিত্রের ‘জল্লাদের দরবার’ নাটক মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
সমাজ-বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা:
বাংলাদেশের মানুষের যে স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষার মানসে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাধীনতার পর বারবার সরকার বদল, হত্যা আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী তৎপরতা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুবসমাজে সৃষ্ট হতাশা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দূর্নীতি ইত্যাদি কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমাজে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ। এ লক্ষ্যে দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণকর শাসকব্যবস্থা যেমন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত গৌরবগাঁথা আর আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। যে আদর্শ, উদ্দেশ্য ও চেতনা নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ তাদের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে, ইজ্জত দিয়েছে হাজার হাজার মা-বোন, আমাদের সমাজ এবং জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের সেই আদর্শ ও চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে- এটিই আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও দায়িত্ববোধ:
মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল চেতনাকে সমুন্নত রাখতে প্রতিক্রিয়াশীলদের সম্পর্কে আমাদেরকে অধিকতর সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। তারা যাতে দেশ ও মানুষের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাদের সব ষড়যন্ত্র ভেঙে দিয়ে সব বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে হবে। দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, কর্মকর্তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সব বিরোধ ও বিভক্তির ঊর্ধ্বে থেকে দেশের অগ্রগতি ও জনগণের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচক যাতে ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং দারিদ্রমুক্ত, সুশিক্ষিত, উন্নত দেশ গড়ে ওঠে সেজন্য একনিষ্ঠভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আমরা যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারব।
উপসংহার:
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা বরাবরই অনেক কঠিন কাজ। লক্ষ্যপ্রাণ আর রক্তগঙ্গার বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা। এর মাধ্যমে অবসান হয়েছিল দীর্ঘ ২৪ বছরের শোষণ ও নিপীড়নের। কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো আমরা গড়তে পারিনি আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। স্বাধীন হয়েও স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ আমরা উপভোগ করতে পারিনা। আমাদের যেমন সংকট আছে, তেমনি সম্ভাবনাও আছে। সব সংকটকে দূরে সরিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। নিজের কর্তব্যবোধ, দেশপ্রেম আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলেই আমরা রক্ষা করতে পারব আমাদের স্বাধীনতাকে।